সিবিএন:
রোহিঙ্গাদের চাপে কক্সবাজার জেলার অর্থনীতি ও পরিবেশ দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। অনতিবিলম্বে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবী তুলেছে কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরামভুক্ত ১৬টি সদস্য সংগঠন। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইউএনইচসিআর-এর অধিকতর সম্পৃক্ততার দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে কক্সবাজার জেলা থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরিয়ে অন্য জেলাতেও স্থানান্তরের সুপারিশ করেন। ফোরামের কো-চেয়ার এবং কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নোঙ্গরের মি. রাশেদ, এডাবের মি. জসিম, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের আমিনুর রসুল বাবুল এবং কোস্ট ট্রাস্টের মকবুল আহমেদ।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ৯টি বিষয়ে মোট ৪১টি সুনির্দিষ্ট দাবি সম্ৃদ্ধ একটি অবস্থানপত্র তুলে ধরা হয়। ৯টি বিষয় বা মূল দাবি হলো:
১) জেলার জনসংখ্যাবিজ্ঞান ভারসাম্য হুমকির সম্মুখীন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করে অন্যত্র তাদের সরিয়ে নেয়া উচিত, ২) রিলিফ কার্যক্রমের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সরকারের কাছে থাকতে হবে, রিলিফ কমিশনারের পদ উচ্চ পর্যায়ে এবং কার্যালয়ে মানব সম্পদ দিতে হবে, ৩) স্থানীয় স্বাভাবিক জীবন যাপন হুমকির সম্মুখীন: প্রকৃতি, অর্থনীতি ও পরিবেশ পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা চাই, ঐড়ংঃ ঈড়সসঁহরঃু- তে বিনিয়োগ করতে হবে, ৪) রিলিফ কার্য়ক্রমে সমন্বয়হীনতা এবং জটিলতা, ইউএনইচসিআরকে নেতৃত্বে নিয়ে আসুন, ৫) জঙ্গিবাদের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলা করতে হবে, মানবাধিকার ও অসাম্প্রদায়িকতার বিকাশে সহায়তা করতে হবে, ৬) জাতিসংঘ সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহকে সরাসরি কার্যক্রম করা থেকে বিরত থাকতে হবে, পরিচালন ব্যয় কমানোর জন্য স্থানীয়করণ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের অঙ্গিকারের প্রতি তাদের সম্মান করতে হবে, ৭) রুয়ান্ডা এবং চেকোস্লোভাকিয়ার মতো মায়ানমার সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করতে শক্তিশালী রাজনেতিক প্রচারণা করতে হবে, ৮) ভিজিবিলিটি বা প্রদর্শন প্রতিযোগিতা বন্ধ করে আসল কাজ করুন, ৯) শিশুদের যতœ ও পুনর্বাসনে ‘কনভেনশন অন দ্য রাইট অব দ্য সিলড্রেন’ (সিআরসি) অনুসরণ করুন।
সংবাদ সম্মেলনে নোঙ্গর কক্সবাজারের মি. রাশেদ বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপক আগমনের কারণে এই বছরের শেষে কক্সবাজারের জনসংখ্যা ৬২% বেড়ে যাবে, যেখানে জাতীয় ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৩%। মেরিন ড্রাইভ এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ছে। এদেরকে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য সরকার ও সুশীল সমাজকে উদ্যোগ নিতে হবে।
কোস্ট ট্রাস্টের মকবুল আহমেদ বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ, অর্থনীতি ও স্বাস্থের উপর রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাব জানতে একটি গবেষণা করা প্রয়োজন এবং তার ভিত্তিতে আগামী বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। তিনি সহায়তা অর্থের বিনিয়েগের ২০% স্থানীয়দের জন্য বরাদ্দ রাখার দাবি জানান।
আমিনুর রসুল বাবুল বলেন, জেলা প্রশাসন এবং রোহিঙ্গা রিলিফ কার্যক্রমকে পৃথক করে ফেলতে হবে। রোহিঙ্গা রিলিফ কমিশনার পদকে সচিবালয় পর্যায়ে হালনাগাত করতে হবে, তথ্য, মনিটরিং এবং সমন্বয়ের জন্য সেনাবাহিনীকে নিযুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রিলিফ কার্যক্রমে ইউএনইচসিআরকে নেতৃত্বের পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে, কারণ সংস্থাটি এই বিষয়টি দেখভাল করার জন্য জাতিসংঘ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত। বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও সংস্থাটির সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
মি. জসিম বলেন, ক্যাম্প এলাকায় বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ধর্ময়ি জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দলকে ক্যাম্পে প্রচারণা চালানোর অনুমোদন দেওয়া দরকার। এই বিষয়ে দীর্ঘ মেয়াদী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘ সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোকে সরাসরি কার্যক্রম বাস্তবায়ন থেকে সরে আসতে হবে, তাদেরকে স্থানীয় সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে, কারণ তারা স্থানীয়করণ এবং ব্যয় কমানোর জন্য অঙ্গিকারাবদ্ধ। সকল আন্তর্জাতিক সংস্থাকে তাদের দৈনিক কার্যক্রমে বাংলা ব্যবহার করা এবং কার্যক্রমের তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করা এবং অভিযোগ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করার আহ্বান জানান।